ভাগ্য যেখানে গড়তে যায় ভাগ্যই সেখানে খেলা করে । সুখের আশায় স্বচ্ছল জীবন যাপনের আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলো ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার এক নারী । কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেশে ফিরেছেন গত ৮ জুন ৬ মাসের পিতৃ পরিচয় হীন সন্তানের মা হয়ে।
ভাগ্যের কাছে হেরে যাওয়া নির্মম নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে ঐ নারী বলেন, তিন যে বাসায় প্রবাস জীবন যাপন করেছেন , ঐ বাসার কর্তাবাবুই হচ্ছে এই ৬ মাস বয়সের সন্তানের বাবা।
ঔ নারী নিজের পেটের সন্তান হলেও পিতৃ পরিচয় না থাকার কারনে কিভাবে বাড়ীতে নিয়ে যাবেন , সেই বিষয় কোন কিছু বুঝতেছেন না ।
তাই এ বিষটি খোলে বলেন বিমানবন্দর আর্মড পুলিশকে। ঔ নারী আরো বলেন তিনি প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হতে সৌদি নিয়োগ দাতা কর্তার কাছে। এক পর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে পরে তাকে সফর জেলে পাঠানো হয়। সফর জেলেই জন্ম হয় আব্দুর রহমান নামের এই ছোট্ট শিশুটির।
নির্যাতনে শিকার ঔ নারী বলেন, নির্যাতনের ঐ বিষয় বাড়ীর কেউ জানে না । আর জানলেও সমাজ পরিবার কিভাবে নিবে। এসব কথা ভেবেই আর্মড পুলিশের কাছে সাহায্য চান ভুক্তভুগী নারী ।
এদিকে আর্মড পুলিশ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হস্তান্তর করেন ব্র্যাক মাইগ্রশন প্রোগ্রামের কাছে। এই নারী বর্তমানে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে অবস্থান করছেন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ঘটনাটি ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক। তবে এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সৌদি আরবের কোনো বাড়িতে তিনি কাজ করতে গিয়েছিলেন, তার নিয়োগকর্তা কে- এগুলো তদন্ত হওয়া উচিত। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করে সন্তানের পিতৃপরিচয় বের করা উচিত।
তিনি বলেন, এর আগে আমরা এই ধরনের ১২টি ঘটনা দেখেছি। তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে আমাদের সোচ্চার ও নীতি নির্ধারকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, অবশ্য এ ঘটনাই প্রথম নয়। এর আগে গত ২৬ মার্চ সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সন্তান দিয়ে দেশে ফিরেছেন নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার কুমারী শাহনাজ আক্তার (২৭)। শাহনাজ সৌদি আরবের মক্কাস্থ কেন্দ্রীয় জেলে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পুত্রসন্তান জন্ম দেন।
এর আগে গত ২ এপ্রিল আট মাসের শিশু সন্তানকে বিমানবন্দরে ফেলেই চলে গেছেন সৌদি ফেরত আরেক নারী।
ত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ চার মাসের মেয়ে সন্তান নিয়ে ওমান থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হন আরেক নারী গৃহকর্মী।
বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তিনি তার বিষয়টি এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ অফিসে গিয়ে বলেন তার সন্তানের পিতা একজন ওমানি নাগরিক।
তিনি বলেন, নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে ওমান পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। এরপর ওমান ডির্পোটেশন ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় তার সন্তানের জন্ম হয়।
এর আগেও ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বরে ওমান থেকে সিলেট বিভাগের আরেক গৃহকর্মী তিন মাস বয়সী সন্তানসহ দেশে ফিরতে বাধ্য হন।
এ ধরনের ঘটনা এখন প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতির শিকার নারী ও তাদের সন্তানরা সমাজ ও পরিবারে অবহেলিত হয়ে বেড়ে উঠবে। এমন ১২ সন্তানকে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে, এখনও করা হচ্ছে বলে জানান শরিফুল হাসান।
মন্তব্য করুন