ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক ‘চেতনা ব্যবসা’ হয়ে গেছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত ১৭ বছর বয়সী মো. আশিকুর রহমান হৃদয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি, বিশেষ করে হৃদয়ের চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস লেখেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন: “অবশেষে হৃদয় মারা গেল। ১৭ বছর বয়সী হৃদয় ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করত, তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। গত ১৮ই জুলাই যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয় সে। তার মাথায় তিনটি গুলি ছিল।”
“গত ৫ই আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে তার চিকিৎসা হয়। সেখানে দুটি গুলি বের করা সম্ভব হলেও, আরেকটি বের করা যায়নি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থা করা হয়নি। আর গুলি বের করতে না পারায় তাকে এতগুলো মাস ধরে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। প্রায়ই তার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আসত।”
“সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে, তাকে শুক্রবার দুপুরের দিকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। বিকেল ৪টার দিকে সেখানেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন—এই দোয়া করা ছাড়া এখন আর কী করার আছে!”
“হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার বলেছেন, ‘আমি আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। নিজের রিকশা ও একটি গরু বিক্রি করে যতটুকু পেরেছি, চেষ্টা করেছি। ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররা হৃদয়ের মাথার তিনটি গুলির মধ্যে দুটি বের করতে পেরেছিলেন। আরেকটি গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো আমার ছেলে বেঁচে থাকত।”
“হৃদয়ের বড় ভাই সোহাগ ইসলামও আক্ষেপ করে বলেছেন যে, তার ভাইয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। এগিয়ে এলে হয়তো সে বাঁচত।”
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে, জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যে যথেষ্ট ‘চেতনা ব্যবসা’ হয়ে গেছে। অনেকেই জুলাইকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল, তাদের কেন আট মাস পরেও সেই ব্যবস্থা করা হয়নি? নাকি এটা শুধু মুখের কথা, আর আহতদের উপেক্ষা করা হচ্ছে?”
“হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার যে প্রশ্ন তুলেছেন, জুলাইয়ের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা, জুলাই ফাউন্ডেশন অথবা সরকার, কিংবা যারা সারাক্ষণ জুলাইয়ের ‘চেতনা’ বিক্রি করে, তাদের মধ্যে কি এর উত্তর দেওয়ার মতো কেউ আছে?”