একটি অন্তর্বর্তী সরকার নাকি মাত্র ৮ মাসে বাংলাদেশকে ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে! আবার এমনও বলা হচ্ছে, এই র্যাঙ্কিং-এ বাংলাদেশ আগে ৪০তম ছিল, যা ৮ মাসে পিছিয়ে এখন ৪৭তম স্থানে নেমে এসেছে।
উত্থাপিত এই দুটি দাবিই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আজকের আমরা তুলে ধরব এই তথ্যের বিভ্রান্তি এবং প্রকৃত সত্য।
প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকার ৮ মাসে বাংলাদেশকে ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত করার যে দাবি করা হচ্ছে, তা মোটেও সত্য নয়। আসল খবর হলো, ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-এর র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে ৪৭তম স্থানে রয়েছে। এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর।
এই র্যাঙ্কিংয়ের জন্য জরিপ চালানো হয়েছিল ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত। যেখানে বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে ৮৯টি দেশকে বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে যখন ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে, তখন বাংলাদেশে কোনো অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় ছিল না। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় নির্বাচিত হয় এবং সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তবে, ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের র্যাঙ্কিংটি তৈরি হয়েছিল তার আগেই, সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে।
অতএব, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তখন ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই র্যাঙ্কিং মূলত রাজনৈতিক প্রভাব, শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মিত্রতা এবং শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেই অর্জিত হয়েছিল।
অন্যদিকে, ইউএস নিউজ এখনও ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হতে পারে।
এছাড়াও, আরেকটি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে যে বাংলাদেশ ১২৩তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ৪৭তম অবস্থানে এসেছে। রিউমর স্ক্যানার ইউএস নিউজ ওয়েবসাইটের আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে বাংলাদেশ এই র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয় ২০২২ সালে। সেই বছর র্যাঙ্কিংভুক্ত দেশের সংখ্যা ছিল ৮৫টি। এরপর ২০২৩ সালে ৮৭টি এবং ২০২৪ সালে ৮৯টি দেশ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোনো বছরেই ১২৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সুতরাং, বাংলাদেশের কখনোই ১২৩তম অবস্থানে থাকার দাবিটি ভিত্তিহীন।
এই গুজবটি কিভাবে ছড়ানো হলো? রিউমর স্ক্যানার বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। প্রথমত, ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি “এশিয়ান সি স্টোরি (Asian Sea Story)” নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই খবরটি প্রকাশ করা হয়। এরপর, ২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল “গ্লোবাল স্ট্যাটিসটিকস” নামক একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও একই দাবি পুনরায় প্রচার করা হয়।
সুতরাং, এই ভুয়া খবরটির মূল উৎস হলো “গ্লোবাল স্ট্যাটিসটিক” নামক টুইটার অ্যাকাউন্ট এবং “এশিয়ান সি স্টোরি” ফেসবুক পেজ।”