বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব বৈদেশিক দেনা পরিশোধের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় দেশের ভাবমূর্তি সুদৃঢ় করতে মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সক্রিয়ভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বৈদেশিক দেনা ছিল প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা কমে ৮২৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় এই দেনা ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা কমে ৮২৯ মিলিয়ন ডলারে এসেছে। কোনো বিলম্বিত দেনা বা জরিমানা নেই, কারণ যথাসময়ে সব বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এলএনজি আমদানিতে — আগে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৬ থেকে ১৭ ডলার খরচ হলেও এখন তা কমে এসেছে ১১ ডলারে।’
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী জুন মাসে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আগে বৈদেশিক দেনা পরিশোধের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মোট বকেয়ার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৫২৯ মিলিয়ন ডলার এবং জ্বালানি খাতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ভারতের বিদ্যুৎ আমদানির বিল এবং কয়লা বিল উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, জ্বালানি খাতে এলএনজি আমদানির বিলই সবচেয়ে বড় অংশ।
পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ জানায়, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা মেটাতে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও আমদানি করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আনুমানিক ৫৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬টি কার্গো এলএনজি আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই সংখ্যা ১১৫টিতে উন্নীত হতে পারে, যার ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৬৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। প্রতি কার্গোতে গড়ে খরচ হবে প্রায় ৫৮৭ কোটি টাকা।
ইএমআরডি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, সরকার ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জ্বালানি ভর্তুকি বরাদ্দ করেছে। সামান্য শুল্ক সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আরও এলএনজি আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৈদেশিক দেনা পরিশোধের জন্য ৬০ দিনের একটি চক্র অনুসরণ করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বিদ্যুৎ খাতের সব বকেয়া পরিশোধ করা হবে।