মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পরিপন্থী, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও অখণ্ডতার প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী অর্থাৎ প্রচলিত আইনের পরিপন্থী কোনো কনটেন্ট বা বিষয় ওভার দ্যা টপ (ওটিটি) প্লাটফর্মে প্রচার না করার বিধান রেখে এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওটিটি খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়, এমন কোনো কনটেন্টও ওই প্লাটফর্মে প্রচার করা যাবে না। এ সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে ওটিটি কনটেন্টভিত্তিক সেবা দেওয়া, পরিচালনা ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে নীতিমালা প্রণয়ন করল সরকার। এটি ওটিটি কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নীতিমালা-২০২১ নামে অভিহিত হবে।
ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কী
এটি এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে দর্শকরা বাড়িতে বসে অনলাইনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন। দেশি-বিদেশি মালিকানায় পরিচালিত বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট এই প্লাটফর্মে মানুষ দেখতে পান। প্রচার হয় বিজ্ঞাপনও।
যা আছে খসড়া নীতিমালায়
খসড়া নীতিমালায় ইন্টারনেট বা সমজাতীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচারিত কোনো তথ্য, অনুষ্ঠান, বিজ্ঞাপন, অশ্লীল তথ্য দেওয়াকে ওটিটি প্লাটফর্মে কনটেন্ট বোঝানো হয়েছে। অশ্লীল কনটেন্টের ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রচলিত আইন ও ওটিটি নীতিমালা এবং এর অধীনে প্রণীত সংশ্লিষ্ট সকল নির্দেশিকাবর্হিভূত কনটেন্ট। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ডিজিটাল কনটেন্ট সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানই ওটিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ওটিটি প্লাটফর্মে যে কনটেন্ট প্রচার করা হবে তা প্রচারের আগে কোন বয়সী দর্শকদের জন্য উপযুক্ত তা উল্লেখ করতে হবে। যেমন, সাধারণ দর্শকদের জন্য বাবা মায়ের তত্ত্বাবধায়নে প্রদর্শনযোগ্য (১২ থেকে ১৫ বছর বয়স) ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য আলাদা কনটেন্ট থাকতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এই প্লাটফর্মে দর্শক প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণে পাসওয়ার্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নিবন্ধন পদ্ধতি
প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবা দেওয়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই এই প্লাটফর্মেরও সরকারের নিবন্ধন নিতে হবে। ওটিটি নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ফরম তৈরি করবেন। সেই ফরমের নির্দেশ মেনে অফেরতযোগ্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন ফরম কিনে তা পূরন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে আবেদন করতে হবে।এখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান একাধিক ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য আবেদন করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ওই পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করতে হবেনা। তাদের জন্য আবেদন ফি রাখা হয়নি। আর ফেরতযোগ্য আর্নেস্টমানি বাবদ দেশি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা আর বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে ২৫ লাখ টাকা আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। ওটিটি প্লাটফর্ম ইকোসিস্টেমে উপস্থাপিত প্রকাশক, কিউরেটেড কনটেন্ট প্রোভাইডার, আনকিউরেটেড কনটেন্ট প্রোভাইডারদেরও নিবন্ধন নিতে হবে। কিউরেটেড কনটেন্ট প্রোভাইডার বলতে বোঝানো হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠান নিজের তৈরি করা বা অন্যের তৈরি করা কনটেন্ট বিতরন চুক্তির অধীনে প্রচার করে। আর আনকিউরেটেড কনটেন্ট প্রোভাইডার বলতে বোঝানো হয়েছে, কোনো প্লাটফর্মের মাধ্যমে একক ব্যক্তি বা প্লাটফর্মের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট বা পেজ যেমন ইউটিউব, ফেইসবুক, গুগল থেকে কনটেন্ট প্রচার করেন। এই সকলকেই প্রনীত নীতিমালার নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ওটিটি পরিচালনার জন্য নিজ বিভাগের অনুমোদন থাকতে হবে। ওটিটিতে কী কী প্রচার করা হবে তার বিস্তারিত উদ্দেশ্যে ও তথ্য উপকরনের ধরন স্পস্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আবেদন যাচাইয়ের ছাড়পত্রের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের আবেদন যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। নিবন্ধন ছাড়া কেউ কোনো কনটেন্ট প্রচার করতে পারবেন না।ওটিটির নিবন্ধন পেতে ন্যুনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে। ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনের কারনে দন্ডিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, কর ও ঋনখেলাপি ব্যক্তি ওটিটি লাইসেন্স পাবেন না। যৌথ মালিকানায় ওটিটির লাইসেন্স পেতে চাইলে প্রত্যেকের শেয়ারের হার উল্লেখ করতে হবে।
নবায়ন
নিবন্ধনের মেয়াদ নির্ধারন করা হয়েছে তিন বছর। দেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য নবায়ন ফি ৩ লাখ আর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে হবে সরকারকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়নে ব্যর্থ হলে দেশি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা আর বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা গুনতে হবে ১ লাখ টাকা। খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়, সরকারের কোনো পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে বা নীতিমালার কোনো উদ্দেশ্য ব্যাহত হলে বিটিসিএল বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের শর্ত ভঙ্গ করলে প্রচার তিন মাসের জন্য বন্ধ করা হবে।
ওটিটিতে যা প্রচার করা যাবে না
জাতীয় সংগীত ও পতাকা, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অসম্মান করে এমন কনটেন্ট প্রচার করা নিষেধ। শিশুর অংশগ্রহণে যৌনাচার বিষয়ে কনটেন্ট, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কনটেন্ট প্রচার করা যাবে না। জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে, রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন বা আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো কনটেন্ট এবং সংবাদ বা টকশো প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নীতিমালায়।
আরও বলা হয়, অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অবনতি হয়, এমন কোনো বিষয় ওটিটি প্লাটফর্মে প্রচার করা যাবে না। নিষিদ্ধঘোষিত কনটেন্ট প্রচার করা যাবে না। কোনো কনটেন্টের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তা যাচাই করতে ওই কনটেন্ট এক বছর ধরে সংরক্ষণ করতে হবে। ওটিটি প্লাটফর্মের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, বিটিআরসি ও বিটিসিএলএর নীতি ও মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে।
তদারকিতে থাকবে কর্তৃপক্ষ
ওটিটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা না হওয়া পর্যন্ত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোনো দপ্তর বা সংস্থা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে। ওই সংস্থাই ওটিটি প্লাটফর্মের তদারকি করবে। সেখানে একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা থাকবেন। যিনি অভিযোগ নিষ্পত্তিতে কাজ করবেন। তার কাছে নিবন্ধিত সকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের ঠিকানা থাকবে।
কৃতজ্ঞতাঃ সারাবেলা
আরো প ড়ুন>> স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের ৬১টি মডেল নিষিদ্ধ!
মন্তব্য করুন