আফগানিস্তানে সবার অংশগ্রহণে নতুন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তালেবান। রোববার তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হওয়ার পর নতুন শাসন কেমন হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে বিশ্বজুড়ে।
তবে তালেবান জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানে অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন করতে চায়। অর্থাৎ তালেবান নন, এমন রাজনৈতিক নেতাদেরকেও এই সরকারে ঠাঁই দেয়া হবে। তালেবানরা দেশ দখল করেছে দু’দিন হলো। কিন্তু এখনো সরকার গঠন না হওয়ার নেপথ্য কারণ হলো এটা। এমনকি এই সরকারে নারীদের জন্যও জায়গা থাকবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগানি বলেন, তালেবান সরকারে অংশগ্রহণের জন্য তারা নারীদের আহ্বান জানাচ্ছেন।
তালেবানের শীর্ষ কোনো নেতার পক্ষ থেকে সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে প্রথমবারের মতো এমন মন্তব্য করা হলো- যেখানে নারীদের অংশগ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। এনামুল্লাহ সামানগানি বলেন, ইসলামিক আমিরাত চায় না যে, নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। শরিয়া আইন অনুযায়ী, সরকারি কাঠামোতে তাদের অংশগ্রহণ থাকা উচিত।
এদিকে আফগানিস্তানে আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গত সোমবার সংস্থাটির এক বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। সম্ভাব্য নতুন সরকার যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় এবং সেখানে যেন নারীদের সমান ও অর্থবহ অংশগ্রহণ থাকে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকে আফগানিস্তানে অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা সাধারণ আফগানদের স্বার্থে তালেবানের সঙ্গেই কাজ চালিয় যাবে। কারণ এখন মানবিক সহায়তা পাঠানোই তাদের আসল উদ্দেশ্য। জাতিসংঘের হিসাবে আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সংঘাতে প্রায় ৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাই দেশটির স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং নারী ও তরুণ জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে এপির খবরে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ যখন দেশ শাসন করেছে তালেবানরা, সে সময়ে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন আমির খান মুত্তাকি। সপ্তাহান্তে অতি গোপনে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি পালিয়ে দেশ ছাড়ার আগে থেকেই আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন আমির খান মুত্তাকি। তিনি তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ওই সূত্রটি বলেছেন, এই আলোচনার উদ্দেশ্য আছে। তা হলো দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সরকারে আমন্ত্রণ জানানো।
কাতারে অবস্থানরত তালেবান মুখপাত্র সুহেইল শাহিন এমন সরকারকে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আফগানিস্তানে নমনীয় ইসলামের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন। এসব আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন আফগানরা বলছেন, গত রাতেও বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। আশরাফ গণি দেশ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। তালেবানের মুখপাত্র শাহিন আরও বলেন, এতদিন ধরে আফগান সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ সব নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত যে কেউ তার অস্ত্র সমর্পন করে তালেবানে যোগ দেবে- তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলো তালেবান: সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে তালেবানরা। একই সঙ্গে তাদেরকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে তারা। সারা দেশ নিজেদের আয়ত্তে আনার পর রাজধানী কাবুল দখল করে তারা দু’দিন আগে। কিন্তু এ সময়ে তাদেরকে দেখা গেছে, আগের চেয়ে ভিন্ন ভূমিকায়। এখন পর্যন্ত রাজধানীতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো নৃশংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, তালেবানরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা আগের চেয়ে উদারতা নিয়ে সম্ভবত সামনে চলার চেষ্টা করছে। কাতারের রাজধানী দোহা’য় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান মুখোমুখি আলোচনা করেছেন তালেবান মুখপাত্র সুহেইলের সঙ্গে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ তালেবানদের দেশ দখল নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তাতে তাদেরকে মেনে নেয়ার এক প্রচ্ছন্ন আভাস রয়েছে। এ জন্য তালেবানদের গণতান্ত্রিক হতে হবে। এ জন্যই তারা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। তালেবানরা এক বিবৃতিতে বলেছে, সবার জন্যই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং পূর্ণ আস্থা নিয়ে আপনার প্রাত্যহিক রুটিন জীবন শুরু করা উচিত।
মন্তব্য করুন