ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ঘটে। এরপর তার শাসনামলে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বড় পরিসরে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তদন্তের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৭ সালে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, “আমি বাংলাদেশি নই, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি।” তবে সরকারি নথিপত্র বলছে ভিন্ন কথা। তার নামে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্ট এবং কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। এমনকি তিনি আয়কর রিটার্নও জমা দিয়েছেন।
দুদক সূত্র অনুযায়ী, টিউলিপের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫০৬৬…..৮, যা ইস্যু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি। এতে তার নাম টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, বাবার নাম শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম রেহানা সিদ্দিক উল্লেখ রয়েছে। জন্ম তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ এবং রক্তের গ্রুপ বি(+) পজিটিভ। ঠিকানার ঘরে দেওয়া হয়েছে — সুধা সদন, ধানমন্ডি, ঢাকা, যেটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন হিসেবেই পরিচিত।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার ভোটার এবং ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর হালনাগাদ তথ্যে তার ভোটার নম্বর ২৬১৩…….৯।
এছাড়া তার নামে বাংলাদেশি পাসপোর্টও রয়েছে। প্রথম পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছিল ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, যার নম্বর ছিল কিউ…..৯৯। তাতে জন্মস্থান এবং ইস্যুর স্থান উল্লেখ করা হয়েছিল লন্ডন, যুক্তরাজ্য। পরবর্তী সময়ে মেয়াদ শেষে ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকেই পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়, নতুন নম্বর এএ……৪। পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছিল আগারগাঁও, ঢাকায়। সেই পাসপোর্টে জরুরি যোগাযোগের ব্যক্তির নাম ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক।
বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণের পর সম্প্রতি ঢাকার একটি আদালত টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এ বিষয়ে লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, “বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কেউ আমার সঙ্গে কখনো যোগাযোগ করেনি। সব সময় তারা মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়ে গেছে। আমার আইনজীবীরা তাদের কাছে চিঠি পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন — এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার নিয়ে আমি বিশেষ কিছু বলব না। এটি শুধু আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা। আমার বিরুদ্ধে কোনো ভুল কাজের প্রমাণ নেই।”
বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে মামলা শুরুর পর টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ থেকেও ইস্তফা দেন।