প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার ৯ ফেব্রুয়ারি চলতি জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিপেবশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, একটি গোষ্ঠী আবারও দেশে অনির্বাচিত সরকার চাচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একবার নয়, অনির্বাচিত সরকার আমরা দেখেছি বারবার। আমরা আন্দোলন করে কেয়ারটেকার সরকার এনেছিলাম। তার ফলাফল কী ছিল, সেটাও আমরা দেখেছিলাম।
তিনি বলেন, ‘যারা অনির্বাচিত সরকার চায়, তারা হালেও পানি পাবে না। অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন যারা দেখছেন, সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসবেন দয়া করে। এটা আর জীবনে হবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা যাদের, আসেন নির্বাচন করেন। জনগণ যাকে মেনে নেবে সেই ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনোদিন হস্তক্ষেপ করবে না। করেও না।’
একটা গোষ্ঠী অনির্বাচিত সরকার চায়—এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে বলে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। এখানে নাকি অনির্বাচিত সরকার আনতে হবে। এই যে ৬টি উপনির্বাচন হলো, এই নির্বাচন সম্পর্কে তো কেউ একটা কথা বলতে পারেনি। বাংলাদেশের একটি মানুষই কি কেউ এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? কেউ পারেনি। তবে কিছু লোক আছে, তাদের সবসময় উল্টো কথা বলতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা বলে অনির্বাচিত সরকার থাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন—মহাভারত হয়তো অশুদ্ধ হয়ে যাবে না, কিন্তু আমাদের সংবিধান? যে সংবিধান জনগণের অধিকারকে সুরক্ষিত করেছে, সেই সংবিধানকে বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকার যারা আনতে চায়, তারা কি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে? তাদের কষ্টটা কোথায়? জনগণ ভালো থাকলে তাদের কষ্ট লাগে কেন? জনগণ যদি দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারে, তবে তাদের দুঃখটা কেন? তাদের দুঃখ আছে। কারণ, এদেশের মানুষগুলো দরিদ্র থাকবে, কঙ্কালসার থাকবে। হাড্ডিসার থাকবে। আর তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে বিদেশ থেকে ভিক্ষা এনে নিজেদের উদরপূর্তি করবে। কে বিএমডব্লিউ গাড়িতে চলবে? সেজন্যই তারা অনির্বাচিত সরকার চায়। অনির্বাচিত সরকার তো আমরা দেখেছি। একবার নয় বারবার। আমরা এ আন্দোলন করে কেয়ারটেকার সরকার এনেছিলাম। তার ফলাফল কী ছিল সেটাও আমরা দেখেছিলাম।’
২০০১ ছাড়া কখনও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৪টি বছর ধারাবাহিকভাবে সরকার চলেছে বলেই আজকে উন্নয়ন যেমন দৃশ্যমান হয়েছে। মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। শান্তি ফিরে এসেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু লোক দেখি বলে যাচ্ছে—২/৩ বছর অনির্বাচিত লোক ক্ষমতা থাকলে ক্ষতিটা কী? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। এটা কোনও ধরনের কথা। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার আসবে। যার জন্য আমাদের এত সংগ্রাম, এত অত্যাচার জেল-জুলুম সহ্য করেছি। বারবার গুলি বোমা গ্রেনেডের মুখোমুখি হয়েছি। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আজকে গণতন্ত্র আছে বলে উন্নতিটা মানুষের কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারা আছে বলেই নির্বাচিত সরকার আছে বলেই এই পরিবর্তনটা সম্ভব হয়েছে। তাহলে মানুষের অসুবিধাটা কী?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের নামে যাদের ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা তাদের বলবো— রাজনীতি করুন। জনগণের কাছে যান, জনগণের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসুন। কোনও আপত্তি নাই। জনগণ যাকে চাইবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। এটাই হলো বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়— সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। কেউ তো বলতে পারবে না ভোট কিনে নিয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বগুড়াবাসী ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। কারণ, যতটুকুই হোক আওয়ামী লীগ আসার ফলে তাদের উন্নতি হয়েছে। তাদের সময় সেই উন্নতি তো তারা দেখেনি। দেখেছে আমাদের সময়।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে কেউ কিছু বলবে না। কোনোরকম অরাজকতা অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর বা জঙ্গিবাদী করতে গেলে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কোনও সন্দেহ নেই।’
বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আজকে কোনও কোনও দল আন্দোলন করছে। তারা জোট করছে। তারা সংগ্রাম করছে মিছিল করছে মিটিং করছে। কই আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু অপজিশনে থাকলে আমরা তো মিটিং মিছিল করতে পারিনি। প্রতি পদে পদে বাধা। কখনও গুলি কখনও বোমা কখনও গ্রেনেড হামলা। মিথ্যা মামলায় হয়রানি। আমাদের একটা নেতাকর্মী স্বস্তিতে থাকতে পারেনি। কিন্তু আমাদের মাঝে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা আছে। আমরা তা দেখাচ্ছি।
যত মিটিং মিছিল করতে চায়, আমরা করতে দিচ্ছি। তবে জনগণের জানমাল রক্ষা করা, জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া—এটা আমাদের কর্তব্য মনে করি। কাজেই অগ্নিসন্ত্রাসীরা যেখানেই মিটিং মিছিল করতে চায়, তখনই আমরা আতঙ্কে থাকি। কখন কোন গাড়িতে আগুন দেবে, বাসে আগুন দেবে। মানুষ পুড়িয়ে মারবে। সেজন্য আমাদের দল, দেশবাসী সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন যারা দেখছেন, সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসবেন দয়া করে। এটা আর জীবনে হবে না। আর ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা যাদের আসেন নির্বাচন করেন। জনগণ যাকে মেনে নেবে সেই ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনোদিন হস্তক্ষেপ করবে না। করেও না।’
আসছে রমজান বিষয় প্রধানন্ত্রী বলেন।
তিনি বলেন, ‘সামনে রমজান, অনেক পত্রিকায় নানা কথা লিখছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই। আমাদের রমজান মাসের খাদ্য, তার কিন্তু অভাব নেই। রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ক্রয় করার কোনও সমস্যা নাই। সেখানে এলসিতেও কোনও বাধা নাই। এখানে কিছু লোক যারা এলসি নিয়ে দুই নম্বরি করে, বাধাটা তাদের জন্যই। কেউ ওভার ইনভয়েস করে কেউ আন্ডার ইনভয়েস করে। তাদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু যারা যথাযথভাবে ব্যবসা করে, তাদের কোনও সমস্যা নেই। রমজানের ছোলা, পিঁয়াজ, তেল, চিনি ডাল পর্যাপ্ত আছে। আরও আমরা কিনছি। এখনও আমাদের কাছে ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে।’
দেশবাসীকে উদ্দেশ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সবাইকে বলবো বিদেশ থেকে আমদানি করা খাদ্যের পরিবর্তে নিজের দেশে উৎপাদন করা খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত। আমাদের অভ্যাসটা সেটাই করা উচিত। আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। আমরা উৎপাদন বাড়িয়ে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরে বিদেশেও রফতানি করতে পারি।’
আড়িপাতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কীভাবে বোমা বানানো যায়, তা দেখানো হচ্ছে। আমরা যদি সেগুলো আড়ি পাততে না পারি, তাহলে তা দমন করবো কীভাবে? তাদের এই সব তথ্য আমরা পাবো কীভাবে? কাজেই আমাদের তো এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতেই হবে। আড়িপাতা নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। কারণটা কী? কী রহস্যের কথা বলবেন—যেটা সরকার শুনলে অসুবিধা হবে? এটা সরকার শোনে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস রোধ করার জন্য যেটুকু করার, সেটুকুই করে। তার বেশি আর কিছু করে না। আর এটা আইনসিদ্ধ। এটা করা যায় বলেই সব দেশে আছে। এ কারণেই আমরা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছি।’
সোশাল মিডিয়ার অপপ্রচার প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এমনভাবে মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করলাম সুযোগ নিচ্ছে এসব অ্যান্টি-সোশাল এলিমেন্ট। এদের অপপ্রচারের জন্য দেশবাসী বিভ্রান্ত না হয়।’
মন্তব্য করুন