রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান সম্ভব না হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এ বিষয়ে নিজেদের প্রচেষ্টা থেকে সরে আসতে পারে — এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) প্যারিস ত্যাগের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
**“যদি এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের হাল ছেড়ে দিতে হবে। দ্রুত আমাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”**
প্যারিসে ইউরোপীয় এবং ইউক্রেনীয় মিত্রদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন মন্তব্য করেন তিনি। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের উপায় খোঁজা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে আসছে। ইউরোপীয় নেতাদের তেমনভাবে সম্পৃক্ত না করেই যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে এবার ইউরোপীয় দেশগুলোকে আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে বৃহস্পতিবার প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক হয়। সেখানে ফ্রান্স, জার্মানি, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠক সফল হয়েছে বলেই দাবি করেছে সব পক্ষ।
বৈঠকের শুরুতেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফকে স্বাগত জানান। সম্প্রতি উইটকফ রাশিয়ায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।
যদিও ফ্রান্স এখনো এই বৈঠক নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে সূত্র বলছে, বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে লন্ডনে আরও একটি বৈঠক হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে ফ্রান্স, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
প্যারিসের বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কো রুবিও বলেন,
**“আমি এবং উইটকফ এসেছি যুদ্ধ বন্ধের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করতে। যদি দেখিই কোনোভাবেই সফল হওয়া যাচ্ছে না, তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলবেন — ‘আমাদের কাজ শেষ।’ কারণ, এটা আমাদের যুদ্ধ নয়, আমরা শুরু করিনি। যুক্তরাষ্ট্র গত তিন বছর ধরে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে। আমরা এই যুদ্ধের ইতি টানতে চাই।”**
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই যুদ্ধ থামানোর জন্য ৮৭ দিন ধরে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটা আদৌ সম্ভব কিনা। সে কারণেই দুই পক্ষকেই আলোচনায় যুক্ত করা হচ্ছে।
এক ফরাসি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা একমত হয়েছেন, এই প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে জানানো হয়, মার্কো রুবিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং যুদ্ধ বন্ধে একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তবে রূপরেখা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি শান্তিচুক্তির খসড়ায় ইউক্রেন সম্মতি দিলেও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই অবস্থায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, প্যারিসের বৈঠকে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা যেন ক্রেমলিনের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেন।
জেলেনস্কির ভাষায়,
রাশিয়া প্রতিদিন, প্রতি রাত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধে তাদের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করা। তাহলেই শান্তিচুক্তি সম্ভব।
সূত্র: সিএনএন, ডয়েচে ভেলে